মুখে তসবিহ ‘কিতাবুল্লাহ’ অন্তরের ‘রিজালুল্লাহ’।


রাসূল (সাঃ) একদিন মসজিদে নববীতে আসরের নামাজ পড়াচ্ছিলেন ।নবীজী (সাঃ) যখন সেজদায় গেলেন , হঠাৎই হযরত ইমাম হোসাইন(আঃ) তাঁর প্রিয় নানাজীর (সাঃ) পিঠের মোবারকের উপর উঠে বসে পড়লেন ।ছোট্ট নাতি খেলার ছলে নানার পিঠে উঠে পড়েছে ।সেজদাকালীন সময় মহানবী (সাঃ) নাতি হোসাইন (আঃ) কে পিঠ থেকে নামাতেও পারছেন না।পাছে পিঠ থেকে পড়ে গিয়ে নাতি যদি ব্যাথ্যা পায় !কেননা ছোট্ট দুই নাতি ইমাম হাসান (আঃ) ও ইমাম হোসেনকে (আঃ) মহানবী (সাঃ) প্রচন্ড মহব্বত করতেন । তাঁদেরকে কেউ কষ্ট দিলে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) অন্তরে খুব ব্যাথ্যা পেতেন।এদিকে নাতিও পিঠ থেকে নামছেন না।মহানবী (সাঃ) এর সেজদাও প্রলম্বিত হচ্ছে ।সেজদা এতটাই দীর্ঘায়ীত হচ্ছিল যে , অনেক সাহাবী তখন নিজ সেজদা থেকে মাথা খানিক উঁচু করে দেখছিল যে , এরকম অস্বাভাবিক দেরী হচ্ছে কেন ?যারাই মাথা তুলছিলেন তারাই দেখছিলেন যে , এক নূরের উপরে আরেক ছোট্ট নূর সওয়ারী হয়েছে । তৎক্ষনাত তারা পুনরায় সেজদাতে চলে গেলেন যতক্ষন নবীজী (সাঃ) নিজে সেজদা থেকে না উঠছেন ।

আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ) এর সেজদায়, নামাজ একমাত্র আল্লাহর জন্য।সেজদারত অবস্থায় নাতি উঠেছে নানার পিঠে।সেজদা আদায় করার সময় অতিক্রান্ত হয় গেছে অনেক আগেই। সাধারন কোন মুসল্লির ক্ষেত্রে এ ঘটনা ঘটলে নামাযই বাতিল হবে। সেজদায় সাধারনত ৩ বার ৫বার ৭বার তসবিহ পড়ে থাকি আমরা।আর রাসুল (সাঃ) এর সিজদাহ(মেরাজ) – সেখানে আল্লাহ ও তাঁর হাবীব ব্যাতীত কেউ নেই, ইবাদত আল্লাহ্‌র জন্য, সিজদাহ আল্লাহ্‌র জন্য , রাসুল সাঃ সিজদাহ থেকে উঠছেন না ইমাম হুসাইনের জন্য, সালাতে মনোঃসংযোগ না থাকিলে সালাত সম্পন্ন হয় না, আর এখানে আল্লাহ্‌র রাসুলের (সাঃ) মুখে তসবিহ- “সুবহানা রবিবয়াল আ‘লা ওয়া বিহামদিহি” অন্তরের(মনোঃসংযোগ) মাঝে ইমাম হুসাইন (আঃ)।

ইতিহাস বলে যে , প্রায় সত্তরবার মহানবী (সাঃ) “সুবহানা রবিবয়াল আ‘লা ওয়া বিহামদিহি” বলেছিলেন ।এক পর্যায় রাসুল (সাঃ) সেজদা থেকে ওঠার জন্য মনস্থ করলেন ।ঠিক তখনই জীবরাইল (আঃ) হাজির হয়ে বললেন , “ইয়া রাসুল (সাঃ),দয়া করে ততক্ষন পর্যন্ত আপনি সেজদা থেকে মাথা উঠাবেন না যতক্ষন ইমাম হোসেন (আঃ) আপন ইচ্ছায় আপনার পিঠ থেকে নেমে না পড়েন।কারন এই দৃশ্যটি মহান আল্লাহর খুব পছন্দ হয়েছে।শুধু আল্লাহ নিজে নন,আরশে আজীমে যারাই আছেন এমনকি সকল ফেরেশতাগনও এই দৃশ্যটি দেখছেন – ।”

হুজুরে পাক (দঃ) আহমদ ও মােহাম্মদ (সঃ) এই উভয় নামেই পরিচিত। কোরআনে এই দুই নামই বর্তমান আছে এবং উভয় নামের মধ্যে পৃথক পৃথক কামালত মর্যাদা) বর্তমান আছে। হজরত মােহাম্মদ (সঃ) আল্লাহ প্রেমিক ও প্ৰেমাস্পদ ছিলেন। কখনও আল্লাহ সুবহানাতায়ালা প্ৰেমিক ও নবী করিম (সঃ) প্ৰেমাস্পদ। আবার আল্লাহ সুবহানাতায়ালা কখনও প্ৰেমাস্পদ এবং নবী করিম (দঃ) প্রেমিক। এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে যে, উভয়ই প্রেমিক এবং প্ৰেমাস্পদ মাওলা হুসাইন (আঃ)।একথা গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে যে, পরম প্ৰেমাস্পদ মাওলা হুসাইন (আঃ)–এর সহিত আল্লাহ পাকের কত গােপন ও ভেদপূর্ণ কথা বলার আছে। তারা কোথা হতে কোন পথে কোন পােষাকে এই বিশাল রাজ্যে এসে গেছেন তাই চিন্তার ব্যাপার।অন্য দিকে “জবেহ আজিম” তথা মহান কোরবানী” আল্লাহ পাক হজরত ইবরাহিম (আঃ)-কে দান করলেন অথচ হজরত ইছমাইল (আঃ)-কে কোরবানী করতে পারলেন না। তারপর হজরত ইবরাহিম (আঃ) কে আকাশ সমূহ ও জমির মালাকুত দেখালেন তা কি কেহ ভেবে দেখেছেন? জবেহ আজিম মহান কোরবাণী কি? এবং হজরত ইবরাহিম (আঃ) কি দেখেছিলেন? এর তাৎপর্য জানতে হলে একমাত্র পাঞ্জতন পাক (আহলে বয়েত) ছাড়া অন্য কোন পথ নাই। এই আহলে বয়েত-ই আল্লাহ্ পাকের নূর পাবার একমাত্র প্রধান উসিলা ও উপায়।


নামাজ (মনোঃসংযোগ) নিয়ে হযরত আলী (আঃ) এর একটি ঘটনা –

এক যুদ্ধে হযরত আলী (আঃ) এর পায়ে তীর বিদ্ধ হইয়াছিল। তিনি তীরের আঘাতের যন্ত্রণায় অস্থির হইয়া পড়িলেন। অনেক চেষ্টা করিয়াও তীর বাহির করতে পারছেন না। নামাযের সময় হযরত আলী (আঃ) নামাযের নিয়ত করলে নবী করীম (সাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) এর ইশারায় কয়েক জন ছাহাবা সজোরে টানিয়া তীরটি বাহির করিয়া ফেলিলেন। রক্তে জায়নামায ভিজিয়া গেল। কিন্তু হযরত আলী (আঃ) ইহার কিছুই টের পেলেন না। নামায শেষে জায়নামাযে রক্ত দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন ইহা কিসের রক্ত।সুবহানাল্লাহ! আল্লাহু আকবর! ইয়া আল্লাহ, এই যদি হয় আপনার হাবীবের ওয়াসী এর সালাত, তাহলে আপনার হাবীবের সালাতে সিজদাহ মুখে তসবিহ ‘কিতাবুল্লাহ’ অন্তরের ‘রিজালুল্লাহ’।হুজুরে পাক (দঃ) উম্মতদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন মাওলা হুসাইন (আঃ) মর্যাদা ও আজিম শান।আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) এর এরকম অসম্ভব রকমের প্রিয় দুই সহোদরের সাথে কলেমা পড়নেওয়ালা নামধারী তথাকথিত মুসলমান উম্মত কি না আচরন করেছে !

কিচ কি মাজাল হে হুসাইন,কিচকো হে হাম চারি,
বাপ কি ঘার ইমামত হে নানাকি ঘার পয়গম্বরী।
সক্কলে হুসাইন দেখ কার হ্ক বী কাহেগা হাশর মে,
এই মেরে মুস্তাফা কি লাল উম্মতে মুস্তাফা ভাড়ী।
ইয়া হুসাইন ইয়া হুসাইন ইয়া হুসাইন ইয়া হুসাইন।

হে নুর ! হে মহাপবিত্রময় ! হে আবা আবদিল্লাহ ! আপনার প্রতি ও আপনার পবিত্র সত্তার প্রতি সালাম, যে সত্তা সমাধিত হয়েছে।আপনার সন্তানগণ ও সাথীদের প্রতি সালাম।আমার পক্ষ থেকে আল্লাহর সালাম অনন্তকাল ব্যাপী, যতদিন এই দিবা-নিশি অবিচল আছে।


আসুন যারা ইমাম পাক কে শহীদ করার মাধ্যমে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) অন্তরে আঘাত করেছিল আর আমরা ইমাম পাক কে ভালবাসার মাধ্যমে তার প্রতিশোধ নিব।


সৈয়দ হোসাইন উল হক

[সাকিল আহমেদ ভাইয়ের আর্টিকেলের ছায়া অবলম্বনে]


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মাতম কোনো তামাশা নয়

আল্লাহর লানত হোক তাদের উপর যারা মুহাম্মদের সন্তানকে এ ভাবে হত্যা করেছে।

তোমাদের মধ্যে কি একজনও মুসলমান নেই❓