জন্মগত ইনসানী ফিতরৎ ও আযাদারী।

 

কান্না মানুষের ফিতরৎ। দুনিয়াতে আসার অর্থাৎ জন্ম নেওয়ার পর সংগে সংগেই সেই ফিতরৎ এসে পড়ে। শিশু ভূমিষ্ঠ হয়েই কাদে, হাসে না। শিশু যদি জন্মের সাথে সাথে চীৎকার দিয়ে না কাঁদে তখন ডাক্তার তার পিঠে থাপ্পড় মেরে হলেও কাঁদায়।কাজেই এ ফিতরৎ পেছনে অবশ্যই কোন না কোন যুক্তি আছে।দেখুন,মানুষ এজন্যেই মানুষ যে তার বিচার–বিবেচনাশক্তি ,আবেগ,উপলব্ধি,দয়া–মায়া,আনন্দ–বেদনা আর সহানুভূতিবোধ আছে। তাই মানুষ হাসে আবার কাঁদে। কখনো রাগ করে, কখনো করে অভিমান। এইসব অভিব্যক্তি মানুষের সুস্থতার অনুভূতিকেই প্রকাশ করে। কারো মাথায় যদি বিশ কেজি ওজনের একটা পাথর পড়ে আর ঐ ব্যক্তিটি যদি কিছুই হয় নি এরকম একটা ভাব করে আগের মতোই স্বাভাবিক আচরণ করে তাহলে তার সুস্থতার ব্যাপারে অবশ্যই প্রশ্ন উঠতে পারে।মানুষের কাছে সবচে প্রিয় হলো তার পরিজন। মানুষের কাছে সবচে প্রিয় হলো তার পরিজন।ধরা যাক ঈদের দিন আনন্দমুখর উৎসবের মুহুর্তে হঠাৎ আপনার পরিবারের একজনের মৃত্যুর সংবাদ পেলেন,তখন কি আগেকার মতোই স্বাভাবিক থাকবেন ! যদি থাকেন,তাহলে চিকিৎসা বিজ্ঞান আপনাকে হাসপাতালে পাঠাতে বলবে। কারণ আপনি সুস্থ নন।কেননা,প্রিয়জনকে হারিয়ে কেউ স্বাভাবিক থাকতে পারে না।প্রিয়জনের বিয়োগান্তক সুস্থ মানুষ মাত্রই ভেঙ্গে পড়বে,কান্নাকাটি করবে,আহাজারি করবে।প্রিয়জনের প্রিয় মুহূর্তগুলোকে স্মরণ করে করে বিলাপ করবে।স্বয়ং রাসূলে কারিম (সাঃ)এভাবে প্রিয়জনের বিয়োগ–ব্যথায় কেঁদেছেন। তাঁর কান্নার ধ্বনি যাঁদের কানে গেছে, তাঁরাও অকপটে রাসূলের সাথে কেঁদেছেন। মনোসাম্য বলে একটি তত্ত্ব আছে। এই তত্ত্বের মাধ্যমে মনোবিজ্ঞানীরা একজনের মনের সাথে আরেকজনের মনের মিল খুঁজে পান। আজকের পৃথিবীতে প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা অনেক কিছুই খুব সহজে বুঝতে পারি। যা আগে সহজে বোঝা যেত না। ধরুন আপনি কোনো ছায়াছবি দেখছেন। ঐ ছবিতে আপনি আপনার মনের অজান্তেই কোনো না কোনো একটি চরিত্রের সাথে নিজেকে মিলিয়ে ফেলবেন। মুখে এই কথাটি স্বীকার না করলেও যখন অপনার ঐ প্রিয় চরিত্রটির কষ্ট দেখে অবলীলায় আপনি কেঁদে ফেলবেন, তখন তা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। অথচ যার জন্যে আপনি কাঁদলেন, সে কিন্তু বাস্তবের কেউ না। কিন্তু আপনি যদি ইসলামের ইতিহাসের এরকম কোনো বিখ্যাত চরিত্রকে ভালোবাসেন, যার সাথে আপনি আপনার অন্তরের মিল বা প্রেম রয়েছে বলে ভাবেন। তাহলে তার করুণ অবস্থার কাহিনী শুনে আপনি চুপ করে বসে থাকবেন, তা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। মনোসাম্যের কারণেই এরকমটি হয়।


আবার দেখুন,মানুষ কাঁদে তার জন্য যাকে সে চিনে বা দেখে, কেউ কি তার প্রপিতা-প্রপিতামহের জন্য কাঁদে ! কাঁদেনা। কেন? কারন তাকে দেখেনি, তার সম্পর্কে জানেওনা। কিন্তু পিতামহ ও পিতার জন্য কাঁদে, কারন তাদের সাথে অনেক স্মৃতি,অনেক দেখেছে। এটাই ফিতরাতুল ইনসান। আসলে ইনসান শব্দটা এসেছে ইহসিয়্যান থেকে, যার অর্থ ভুলে যাওয়া। ভুলে যাওয়া মানুষের ফিতরাত। আর এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা নেয়ামত যে ইনসান তার দুঃখ দুর্দশার কথা ধিরে দিরে ভুলে যায়। যে জন্য কেউ যদি তার খুব প্রিয় কাউকেও হারায় তাহলেও আস্তে আস্তে ভুলে যায়। যেদিন কেউ মারা যারা সেদিন যেভাবে কাঁদে চেহলামে সেভাবে পারেনা, মৃত্যুবার্ষিকিতে কাঁদে আরও কম, দুই তিন বছর পরে শুধু আনুষ্ঠানিকতা থাকে, কান্না থাকেনা।কাজেই শুরুতেই বলেছিলাম,এ ফিতরৎ পেছনে অবশ্যই কোন না কোন যুক্তি আছে, তবে এটা আমার আসল বক্তব্য নয়।দুনিয়াতে মানুষ আসে যায়। কত ভাবে মানুষের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু এ কান্না এবং শাহাদতের কান্নার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।কেননা দেখেন চৌদ্দশ বছর পরও মওলা হুসাইন আঃ গোলামেরা না তারা মওলা’কে ভুলেছে না কান্না থামিয়েছে! এটা আল্লাহর মাজেজা নয়তো কি !

ভেবে দেখেছেন কি ? জন্মগত ইনসানী ফিতরৎ কে কেউ কি অস্বীকার করতে পারবেন ? মানুষ কাঁদবার সময় কাঁদে হাসে না। কান্না এমনি আসতে পারে না। তার পিছনে একটি দর্শন থাকতে হবে। আল্লাহর জন্যই হােক আল্লাহর নবী (দঃ) জন্যই হােক যখন সে যে ইবাতদই করুক না কেন, তার মধ্যে কান্নার বিষয় বস্তু থাকতে হবে এবং যখন সে তার অথ্যাৎ কান্নার কথা বুঝতে পারবে তখনই ফিতরৎ অনুযায়ী আপনা/আপনি কাঁদতে থাকবে। আর প্রেমিকের এক ফোঁটা চােখের জলই দোজকের ভীষণ লেলীহান শিখাকে নিভিয়ে দিতে যথেষ্ট। তাই হযরত রাবেয়া বছরী (রহঃ) বলেছিলেন:-“হায় মাবুদ! আমি যদি তোমার সেই গোপন ভেদ প্ৰকাশ করে দিই। তবে তোমার দোজখ নিভে যাবে”।মানুষ যখন শোনে যে, দয়াল নবীজী (দঃ) হিজরতের সময় ও এর পূর্বে জঙ্গে বদর, জঙ্গে ওহােদ, জঙ্গে খন্দক ইত্যাদি ঘটনা, পেটে পাথর বাঁধার ঘটনা, উম্মতি উম্মতি বলে কাদার ঘটনা, এক কথায় উনার জীবনে সমস্ত দুঃখপূর্ণ ঘটনা শুনে তখন নবী প্রেমের উম্মাত হয়ে কেঁদে কেঁদে অস্থির হয়ে চোখের জল ফেলে এবং তা পরকালের সম্ভল হয়ে যায়। তেমনিভাবে আহলে বয়েতের ঘটনা যদি না শুনতে পায় তাহলে কি করে সে কাঁদবে। যাদের মহব্বতের জন্য আল্লাহপাক স্বয়ং হুজুরে পাক (দঃ) এর দ্বারা “ছুরে শুরাতে” হুকুম দিলেন “বল আমি তোমাদের কাছে আমার নিকট আত্মীয়া বা আহলে বয়েতে মহব্বত ব্যতীত আর কোন প্রতিদান চাই না”।মানুষ যতক্ষণ তার অভ্যন্তরীণ সত্তার দিকে প্রত্যাবর্তন না করে এবং আল্লাহর বিশেষ বান্দার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত না করে ততক্ষণ তার অন্তর নরম হয় না, তার কান্নাও আসে না। তাই ইমাম হুসাইনের মত ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য করার মাধ্যমে মানুষ যখন নিজের দিকে প্রত্যাবর্তন করে তখন সে মূলত নিজ সীমিত অন্তরের সঙ্গে অসীম এক অন্তরের সম্পর্ক স্থাপন করে। সুস্পষ্ট যে, এরূপ সম্পর্ক স্থাপনের ফলে মানুষ অসীমের সাথে সংযুক্ত হয়। যেমনভাবে, কোন ক্ষুদ্র গর্তে জমা পানিকে যদি অসীম সমুদ্রের সাথে সংযুক্ত করা না হয় ঐ স্বল্প পানি অসীমের সংস্পর্শ ছাড়া দুর্গন্ধময় হয়ে যায় অথবা রৌদ্রতাপে শুকিয়ে যায়। কিন্তু যদি ঐ ক্ষুদ্র পানিকেই মহাসমুদ্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয় তবে ঐ ক্ষুদ্র পানিটুকুই সকল প্রকার কলুষতা থেকে মুক্ত ও ধ্বংস হতে রক্ষা পায়।
আল্লাহর নবীর আহলে বাইতের জন্য (বিশেষত ইমাম হুসাইন আঃ জন্য) ক্রন্দন তাঁদের প্রতি ভালবাসার প্রকাশ এবং বুদ্ধিবৃত্তি তা সমর্থন করে। ইমাম হুসাইনের (আঃ) জন্য ক্রন্দন প্রকৃতপক্ষে পূর্ণতার সকল গুণের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসূলের (সা.) নিকট প্রত্যাবর্তনের শামিল। কারণ, ইমাম হুসাইনের (আঃ) প্রতি ভালবাসা নিছক ব্যক্তিকেন্দ্রিক কোন বিষয় নয়; বরং ইসলামের পূর্ণতার সকল দিক তাঁর মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছিল এবং তিনি আল্লাহর দীনকে পুনরুজ্জীবিত করতে মাযলুম ভাবে শহীদ হয়েছেন। তাঁর জন্য ক্রন্দন মূলত সত্য ও ন্যায়ের জন্যই ক্রন্দন। তাঁর শাহাদাতের মাধ্যমেই সত্য ও ন্যায় প্রকাশিত হয়। তাঁর লক্ষ্য ও কর্মপদ্ধতির পরিচয় লাভের মাধ্যমেই ইসলামের পরিচয় লাভ করা যায়। আর তাই হাদীসে তাঁর শাহাদাতের স্মরণে ক্রন্দনের সওয়াব সম্পর্কে রাসূলের (সা.) বলেছেনঃ ‘যে কেউ ইমাম হুসাইনের জন্য ক্রন্দন করবে অথবা কাউকে কাঁদাবে অথবা অন্তত কান্নার ভাব করবে, তার জন্য বেহেশ্ত ওয়াজিব হবে।’ কারণ, ইমাম হুসাইনের পরিচয় এবং তাঁর অবিস্মরণীয় কর্মের সাথে পরিচয় লাভের ফলে মানুষ আল্লাহর প্রতি প্রত্যাবর্তন ও তাঁর জন্য আত্মত্যাগে উৎসাহিত হয়।ইমাম হুসাইনের (আঃ) ওপর আপতিত মুসিবতের স্মরণে হৃদয়ে যে অগ্নি প্রজ্বলিত হয় তাঁর জন্য অশ্রু বিসর্জন ঐ দগ্ধ হৃদয় উপশমে সাহায্য করে। ইমাম হুসাইনের জন্য ক্রন্দন অত্যাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে এক প্রকার বাস্তব সংগ্রাম। এর মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় অত্যাচারী শাসকদের আচরণের প্রতি আমরা বীতশ্রদ্ধ ও ক্রন্দন তাদের প্রতি ঘৃণার প্রকাশ।আহলে বাইতের অনুসারীরা আহলে বাইতের, বিশেষত শহীদদের নেতা ইমাম হুসাইনের(আঃ) জন্য ক্রন্দনের মাধ্যমে ঘোষণা করেঃ আমরা ইতিহাসের পরিক্রমায় ইয়াযীদ ও ইয়াযীদের অনুসারীদের বিরোধী এবং ইমাম হুসাইন ও তাঁর মত ব্যক্তিত্বদের পক্ষে আছি। এ লক্ষ্যেই তারা ইমাম হুসাইনের (আঃ) স্মরণকে জাগরুক রাখে।
ইমাম হুসাইন(আ)’এর নজির বিহীন শাহাদাতের স্বরনে যে শোক-অনুষ্ঠান পালন করা হয় তাকেই আযাদারী বলা হয়।আযাদারী এমন এক মহা নেয়ামত যেটা শুধু শরিয়ত ভিত্তিক ব্যাপার নয় বরং আযাদারি পুরো বিশ্বের মানবতার কেন্দ্রবিন্দু।আযাদারীর সম্পর্ক শুধু দ্বীনের সাথে নয় বরং আযাদারীর সম্পর্ক হচ্ছে বিশ্ব মানবতার সাথে । উদাহরন স্বরূপঃ আমরা পথ চলার সময় অনেক ধরনের দুর্ঘটনা দেখে থাকি, এবং এরই সাথে আমরা প্রত্যেক দুর্ঘটনা’তে লক্ষ্য করি যে , যদি কোনো ব্যাক্তি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হোন,তখন উপস্থিত প্রায় মানুষই দৌড়ে যান তাকে দেখার জন্য । এবং এরই সাথে কেউ কেউ পানি কিংবা অন্যকিছু দ্বারা সেবা করার জন্য এগিয়ে আসেন ।তবে কখনো আমরা এই চিন্তাধারায় লিপ্ত হইনা যে , উক্ত আহত ব্যক্তি হিন্দু , মুসলমান , বৌদ্ধ , খৃস্টান কিংবা শিয়া সুন্নী আছে কি না।যদি কোনো না কোনো কোনো কারনে আমরা যদি এটা বুঝতে পারি উক্ত ব্যক্তি মুসলিম কিংবা হিন্দু এই ব্যাপারটা আমরা সর্বদা এড়িয়ে চলি,আর এই ধরনের নীতিকেই বলা হয় মানবতা।আর এই মানবতার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে আজাদারী।
কেনোনা ইমাম হুসাইন (আঃ) নিজ বেদনাদায়ক শাহাদাতের মাধ্যমে শুধু দ্বীন এ বেলায়েত রক্ষা করেন নাই,বরং বিশ্ব মানবতাকে রক্ষা করেছেন। ইমাম হুসাইন(আ)’নিজ উত্তম চরিত্রের বিনিময়ে শুধু মুসলিমদেরকে শিক্ষা দেননি,বরং পৃথিবীর সকল জাতিকে মানবতার শিক্ষা দিয়ে গেছেন।যার একটি উল্লেখ্যযোগ্য ঘটনা হলো এই যেঃ কারবালার প্রান্তরে হুর নামক এজিদি সিপাহসালার(যিনি আশুরার রাতে এজিদি সেনাদের ত্যাগ করে ইমাম হুসাইন’এর কাছে ফিরে আসেন)ইমাম হুসাইন(আ)’এর কলার ধরে চেঁচামেচি করে,তখন ইমাম হুসাইন(আ)’মুচকি হাসি দিয়ে বলেনঃ হে হুর তুমি হয়তো পিপাসিত তোমার ঠোঁট দুটি পিপাসায় ফেটে গিয়েছে,এরপর হুরকে পানি দিয়ে বললেনঃ হে হুর এই নাও আগে পানি পান করো এবং নিজ সেনাদের আগে পানি পান করিয়ে দাও,অতঃপর হুর ও তার সেনারা পানি পান করে।যখন সকলেই পানি পান করে ফেলেন তখন ইমাম হুসাইন(আঃ)’অবশিষ্ট পানিটি এজিদি সেনারদের ঘোড়াকে পান করিয়ে দেন।লক্ষ্যনীয় বিষয় সম্মানিত পাঠক উপরোক্ত ঘটনার মাধ্যমে ইমাম হুসাইন (আঃ)’শিক্ষা দিচ্ছিলেন যে হয়তো জালিম সম্প্রদায় আমার রক্তের পিপাসিত কিন্তু আমি হুসাইন(আঃ)’হচ্ছি রাহমানির রাহীমের মনোনীত রাহবার,তাই আমি কোনো মাখলুককে আল্লাহর নেয়ামত থেকে বঞ্চিত রাখতে পারিনা।তাই ইমাম হুসাইন(আ) রাহমানির রাহীমের চরিত্র দেখিয়ে পুরো বিশ্ব মানব জাতিকে দেখিয়ে দিলেন।ইসলাম ও মানবতা ক্ষমতা এবং ধনদৌলতের নাম নয়,বরং ইসলাম ও মানবতা প্রধান শিক্ষক হলেন আল্লাহর মনোনীত হাদীগন।জনগনকে একটু লক্ষ্য করা উচিত কোনো আহত ব্যাক্তি যদি মাটিতে পড়ে ছটফট করতে থাকে তখন কোনো ব্যাক্তিই তার ধর্ম কিংবা মাহ্জাবের চিন্তা না করে এগিয়ে আসে,তাহলে মানবতার শিক্ষক তথা ইমাম হুসাইন(আঃ)’ যিনি নিজ শত্রুদেরকেও পানি পান করিয়ে রাহমানির রাহীমের রাহবার হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরছিলেন,সেই মহান ইমাম ও তার পরিবার পরিজনও সঙ্গীসাথীকে পিপাসিত অবস্থায় জবাই করে দিলো।যে হুসাইন এজিদি সেনারা ঘোড়াকে পর্যন্ত পানি পান করিয়েছিলেন।সেই হুসাইন (আঃ)’ এজিদি সেনার নিকট যখন নিজ ছয়মাসের শিশুকে নিয়ে গিয়ে শিশুর জন্য পানি চাইলেন,কিন্তু এজিদি সেনারা ইমাম হুসাইন(আ)’এর ছয়মাসের শিশুকে পানির বদলে ভারী তীর নিক্ষেপ করে।এরূপ বহুত ঘটনা যেটা কারবালার প্রান্তরে ঘটেছে,যেটা বিশ্ব মানুষকে মানবতার শিক্ষা দিচ্ছে,জনগন ইমাম হুসাইন(আ)’এর নজিরবিহীন শাহাদাতকে স্বরন করে হুসাইনী মুসলমান যে আয়োজনটা করে থাকেন তাকেই আযাদারী বলা হয়।আর এ আযাদারীতে কেবল হুসাইনী মুসলমানগন শুধু নয় বরং বিভিন্ন ধর্মের মানবতাপন্থী অনুসারীরা যোগদান করেন।
বিশ্বব্যাপী উগ্রবাদের হুমকির কারনে ইউরোপ আমেরিকার সাধারন জনগন যেখানে মুসলীমদের সন্ত্রাসবাদী হিসাবে আখ্যায়িত করে ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয় অধিকিন্তু ওরাই মাওলা হুসাইন আলাইহিস সালাম ও তার অনুসারি জানলে ভালবেসে বলেঃ Imam Hussain (AS) a symbol of justice, love, peace, forbearance, patience and protection of rights of humanity.They said that at this critical juncture of national life, the people needed to imbibe the essence of message imparted by the epoch of Karbla.They said that Hussainyat was all about struggle for peace, harmony in society and a unwavering fight against the evil forces of terrorism and chaos that sought to bring the fair name of Islam.karbala A war of 72 that has left,A lesson for the Billions.
তার মূল কারন এটাই যে ইমাম হুসাইন কারবালাতে মানবতাকে অমানবিকদের কবল থেকে পৃথক করে দিয়েছেন,যাহা কোনদিন কোনো দানবদের হাতে জিম্মি হবে না।তাই শুধুমাত্র শয়তান ও দানব এজিদের অনুসারীরা ইমাম হুসাইনের আযাদারীর বিরোধিতা করে ।
আকীদাগতভাবে আযাদারীর মোট দুটি উদ্যেশ্য রয়েছে যথাঃ ১.সমাবেদনা পেশ করা, ২.জুলুমের প্রতিবাদ জানানো।সম্মানিত পাঠক উল্লেখিত দুটি উদ্দেশ্য শরীয়তের ফুরু এ দ্বীন তথা তাওয়াল্লা এবং তাবার্রার অংশবিশেষ ।আর এটাই মূল কারন যে আযাদারী আহলেবাইতের সাথে প্রেম আছে বলেই শুধু করা হয়না,বরং আহলেবাইতের প্রেমের সাথে সাথে আহলেবাইতের শত্রু এবং খুনিদেরকে ঘৃনা আছে বলেই আযাদারী করা হয় ।
১.সমাবেদনা পেশ করাঃ সমাবেদনা জানানো কোনো ধর্মীয় কিংবা কোনো জাতির অথবা সামাজিক প্রথা নয়।বরং সমাবেদনা জানানোর সম্পর্ক হচ্ছে ফিতরাতের সাথে,একজন সত্যিকারের মানুষ সে যেই জাতি কিংবা ধর্মের হোকনা কেন? সমাবেদনার বিরোধিতা করতে পারেনা।তাই আমরা প্রত্যেক জাতির মধ্যেই দেখে থাকি কোনো দুর্ঘটনা হলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সমাবেদনা কিংবা শান্তনা দিতে আসেন।এই সমাবেদনা যেহেতু আল্লাহর দেয়া ফিতরাতের অংশ যেটা প্রত্যেক জাতি মধ্যে রয়েছে,তো এতে কোনো ধর্ম কিংবা কোনো ফিকাহর মুজতাহিদ কিংবা পন্ডিতগন ফতোয়া দেয়ার অধিকার রাখেন না।কারন যেটা ফিতরাতে রয়েছে সেটাতে কোনো ফতোয়া কিংবা ইজতিহাদের প্রয়োজন পড়েনা।আমরা বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী (সাঃ)’এর উম্মত,আর আমাদের নবী (সাঃ)’এর প্রাণপ্রিয় নাতি ও জান্নাতের নেতা ইমাম হুসাইন (আঃ)’ইসলাম এবং মানবতা রক্ষা করার জন্য কারবালার প্রান্তরে নিজ সাথীগনকে নিয়ে নির্মমভাবে শহীদ হোন।তাই প্রত্যেক মুসলমান এবং মানবতাপন্থী সকল মানুষের উপর একান্ত জরুরি ইমাম হুসাইন (আঃ)’এর নির্মম হত্যাকান্ডের সমাবেদনা নবী (সাঃ)’ও তার আহলেবাইতকে দেয়া।তাই বিশ্বের প্রত্যেক মানবতাপন্থী মানুষ আযাদারীর মাধ্যমে ইমাম হুসাইন(আঃ)’এর শাহাদাতের সমাবেদনা জানিয়ে থাকেন।
২.জুলুমের প্রতিবাদঃ আযাদারীর দ্বিতীয় অংশটি হলো ইমাম হুসাইন(আ)’এর হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানানো।কেননা আজ মানবতার সম্মান বজায় আছে শুধুমাত্র কারবালার কারনে।তাই বিশ্বের সকল মামুষ আযাদারীতে জোড় হয়ে শুধু ইমাম হুসাইনের (আঃ) শাহাদাতের সমাবেদনা জানায় না বরং এর সাথে ইমাম পাকের খুনিদের প্রতিবাদ করেন এবং লাঞ্ছিত করে থাকেন।আর এই প্রতিবাদ বিষয়টি কোনো ধর্ম কোনো ফিকাহ কোনো জাতি বিরোধীতা করতে পারবেনা শুধুমাত্র অমানুষ এবং অমানবিক ব্যাক্তি ব্যাতিত।কেনোনা আমি লক্ষ্য করে দেখেছি,আর এটা প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীদেরকেও মানতে হবে যে,প্রত্যেক ধর্ম সে হিন্দু, মুসলমান, খৃস্টান কিংবা অন্য কোনো ধর্ম হোকনা কেন ! প্রত্যেক ধর্ম জুলুম অত্যাচার এর বিরুদ্ধে কথা বলেছে,পবিত্র কুরআন,বাইবেল,গীতা সহ প্রত্যেক ধর্মীয় গ্রন্থগুলো সাক্ষী জুলুম,অত্যাচার,অন্যায়,হত্যাকান্ড হচ্ছে মহা পাপ।তাই আমার জানা মতে জুলুমের প্রতিবাদ জানানো বিষয় নিয়ে কোনো ধর্মের লোক বিরোধীতা করেনা।আর যেইবা প্রতিবাদের বিরোধীতা করে তাহলে সে উক্ত জুলুমের সাথে জড়িত থাকার কারনেই করে।তাই এটাই বাস্তব যে আযাদারী একজন মানুষকে সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করে। কেননা আযাদারী মানবতার উত্তম শিক্ষা প্রদান করে থেকে একজন সঠিক মানুষ হওয়ার জন্য।তাহলে এখান থেকে এটাও প্রমান হয়ে গেলো আযাদারীই হচ্ছে “আমর বিল মারুফ” এবং “নেহি আনিল মুনকার” এর শিক্ষা কেন্দ্র।

আমর বিল মারুফ এবং নেহি আনিল মুনকার শুধু রাসূলুল্লাহ (সাঃ)’এর শরীয়তের ফুরু এর অংশ নয় , বরং এটা প্রত্যক ধর্মের উসুল।আর প্রত্যেক জাতিই নিজ নিজ ধর্ম হিসেবে মেনে থাকেন একজন অত্যাচারী জালিম এবং তার সমর্থকগনের প্রত্যেক আমল ও পুন্য কর্ম বিফল এবং সে কোনো দিন বেহেস্তে যেতে পারে না।তাহলে বুঝা গেলো আযাদারীই হচ্ছে প্রত্যেক ধর্মের নৈতিক শিক্ষাকেন্দ্র।কিংবা মানবতার ভাষায় বলা যেতে পারে আযাদারীই হচ্ছে সুষ্ঠ উম্মতের সার্টিফিকেট।তাই আজ যারা যারা আজাদারীর উপর ফতোয়া দিচ্ছে তারা সয়ং মওলা হুসাইন (আ)’এর হত্যাকান্ডের পক্ষে রয়েছে, কেনোনা যে আযাদারী প্রত্যেক ধর্ম এবং প্রত্যেক জাতির নৈতিক শিক্ষার দিকে ধাবিত করছে,সে আযাদারীর বিরোধিতা একমাত্র জালিম মিথ্যাচার এবং ফেতনাবাজরাই করে থাকে।তাইতো ওয়ালি এ হিন্দ খাজা মইনুদ্দিন চিশতী ফুৎকার করে বলে গিয়েছেন “দ্বীন আস্ত হুসাইন” অর্থাৎ সয়ং দ্বীন হচ্ছে হুসাইন (আঃ)।তাই আযাদারী ব্যাতিত হুসাইনী দ্বীন বুঝা অসম্ভব।তাই আসুন ভিবিন্ন সম্প্রদায়ের নাটকবাজ মুল্লা পন্ডিতদের ফতোয়া বাদ দিয়ে,এক হুসাইনী পতাকারতলে একত্রিত হয়ে আযাদারী পালন করি।এরপরও বনী উমাইয়াদের শিক্ষাকেন্দ্র থেকে শিক্ষা হাসিল করে যারা বড় বড় মুফতি এবং মুল্লা সেজে আছেন তারা নিজ গুরু এজিদের জুলুম অত্যাচার লুকিয়ে রাখার জন্য ফতোয়া দিয়ে বেড়ায় যে আযাদারী শিরক বিদআত কুফর ইত্যাদি।মূলত আযাদারীদের বিরুদ্ধে তথাকথিত মুল্লা মৌলভীদের ফতোয়া দেয়াটা শুধু ইসলাম বিরোধী ব্যাপার নয় বরং সকল ধর্ম এবং বিশ্ব মানবতা বিরোধী বিষয়।সূরা আন নিসা এর ১৪৮ আয়াত দ্বারা সমস্ত ফেকাহবিদদের একমত হওয়া দরকার যে,ইমাম হুসাইন (আঃ)’এর শাহাদাত কোনো তুচ্ছ ব্যাপার নয়।বরং ইমাম হুসাইন (আঃ)আল্লাহর দ্বিন এ হক বাঁচাতে শহীদ হয়েছেন,এবং ইমাম পাকের আযাদারী জুলুমের বিরুদ্ধে এবং মজলুমের হক আদায়ের জন্য এক নৈতিক শিক্ষা দিয়ে আসছে,এজন্যই আযাদারীকে মন্দ না বলে,বরং আযাদারীর রহস্য সঠিক ভাবে জানার পর বিবেচনা করা উচিত।মনে রাখতে হবে যে দল আযাদারীর বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা করছে তারা ইসলামী ফিকহ এর ধংসের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। হুসাইন(আ)’এর হত্যার সমর্থ ব্যাতিত আর কেউ আযাদারীর বিরুদ্ধে কথা বলবে না।তাই আযাদারি শুধু ৬১হিজরীর এজিদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে না।বরং প্রত্যেক যুগেত লুকায়িত এজিদকে বেরিয়ে আনতে আযাদারীই একমাত্র সহায়ক।তাই আযাদারীর কারনে ইসলামের প্রত্যেক শত্রুদের থেকে ইসলাকে হেফাজত রাখা সম্ভব।বুঝে নিতে হবে যারা আযাদারীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে মূলত তারাই এজিদি দল,যারা আজ ইসলামের নামে ইসলামকে ধংস করছে।ইমাম হুসাইন(আ)’এর শাহাদাত কোনো তুচ্ছ ব্যাপার নয়।বরং ইমাম হুসাইন আল্লাহর দ্বিন এ হক বাঁচাতে শহীদ হয়েছেন , এবং ইমামের আযাদারী জুলুমের বিরুদ্ধে এবং মজলুমের হক আদায়ের জন্য এক নৈতিক শিক্ষা দিয়ে আসছে,এজন্যই আযাদারীকে মন্দ না বলে , বরং আযাদারীর রহস্য সঠিক ভাবে জানার পর বিবেচনা করা উচিত।মনে রাখতে হবে যে দল আযাদারীর বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা করছে তারা ইসলামী ফিকহ এর ধংসের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।তাই আসুন আমরা হুসাইনী পতাকাতলে একত্রিত হয়ে আযাদারী কায়েম রাখার ওয়াদাবদ্ধ হই।যাতে দ্বীন এ ইসলাম সকল শত্রুদের কবল থেকে মাহফুজ থাকে।

[অধমের লিখা আল-কোরআন ও হাদীসের আলোকে “জবেহ আজিম এবং জিকিরে শাহাদাত”শীর্ষক গ্রন্থখানার আলোকে]



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

মাতম কোনো তামাশা নয়

আল্লাহর লানত হোক তাদের উপর যারা মুহাম্মদের সন্তানকে এ ভাবে হত্যা করেছে।

তোমাদের মধ্যে কি একজনও মুসলমান নেই❓